Wednesday, February 11, 2015

Quipis - my first bangla post

একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় – বাঙালি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। তা সর্বত্র কিনা জানিনা, কলকাতা ছাড়া আমার দেখা আর দুটো মেট্রো শহর, যথা বেঙ্গালুরু আর বোম্বাই তে বাঙ্গালির অবাধ উপস্থিতি। আর যশ্মিন দেশে যদাচার। জেদেশেই থাকুক, বাঙালি ঠিকই ম্যানেজ করে নেয়। তা সে লোকাল ভাষার প্রয়োগই হক বা সেই জাতির খাবার খাওয়া ও রাঁধায় পটু হওয়া হক বা অন্য কিছু। ব্যাস, আবার এসে গেল খাবারের কথা। আচ্ছা, বাঙালি আর খাবার কি বেশীক্ষণ দূরে দূরে থাকতে পারে কখনও? কথায় আছে --- “বাঁচার জন্য খাওয়া” – তবে বাঙ্গালির ক্ষেত্রে কথাটা একটু উলটে যায় --- বাঙ্গালির জন্যে কথাটা হয়ে যায় – “খাওয়ার জন্যে বাঁচা”। আমি খুব সম্প্রতি ঘাঁটি বদল করে এই মারাঠাল্যান্ডে ল্যান্ড করেছি। আগে যখন বেঙ্গালুরুতে থাকতাম, তখন ভারি দুঃখ ছিল – আরে যত্রতত্র মিষ্টির দোকান পাওয়া যায়না যে। ধীরে ধীরে সে দুঃখ মজে এল। বোধোদয় হল যে বাঙ্গালির মিষ্টি প্রীতির সাথে অন্য কোন জাতির তুলনা করাটা অন্যায়। পরে নাহয় কোনদিন এইনিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আজ যেজন্যে লেখা, তার নাম কিউপিস। না, মিষ্টি নয়, তবে স্বাস্থ্য আর স্বাদের বেশ সুষম মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এই “কিউপিস”। মুম্বাইতে স্বাস্থ্য সচেতনতা দিয়ে দারুন ব্যাবসা করা যায়। প্রায় সব জায়গার সব পদেরই একটা স্বাস্থ্যকর ছোটভাই আছে, তবে তার জন্যে সামান্য বেশি গাঁটের কড়ি খরচ । এই কিউপিস কিন্তু সে পথে হাঁটেনি। ওদের ভাঁড়ারের সংগ্রহ বিশাল কিছু নয় যে দেখতে দেখতে চিত্রগুপ্তের ফর্দের কথা মনে পড়বে। আর যেটুকু আছে তাতে স্বাদ, স্বাস্থ্য আর রেস্ত, তিনটেরই খেয়াল রাখা হয়েছে। একদিন অফিস থেকে ফিরছি। একটি ছোট্ট, আশপাশের কালো খয়েরি কাঁচগুলো মাঝ থেকে আলাদা উজ্জ্বল লাল হলুদ (ইস্ট বেঙ্গল ছাড়া অন্য রঙও ও আছে এতে) মুখ নিয়ে উঁকি মারা এই দোকানটা দেখে ভারি কৌতহল হল। ফর্সা কাঁচের দরজা ঠেলে দেখি সামনেই তিনটে পরিষ্কার তাওয়ায় কিছু সেঁকছে, তেলের চিন্‌হমাত্র নেই। ব্যাগের মধ্যে অবশিষ্ট কিছু সোডেক্সোর (ভারি মজাদার আর কাজের এই গুলো) সদব্যাবহার করার আশায় মেনু কার্ডটা চাইলাম। প্রথম পাতাতেই চমক - রকমারি পুরভরা নোনতা পাটিসাপটা নাকি ভুট্টার আটায় তৈরি। কোনটা অর্ধচন্দ্র, কোনটা পূর্ণচন্দ্র আকারের। বুঝলেন না তো? পূর্ণচন্দ্র মানে পকেট আর অর্ধচন্দ্র হল বিগ স্মাইল। ঠিকই ধরেছেন – এইখানে উলটে গেছে আকারের মানেগুলো। পাটিসাপটাগুলোর পেটের বা মাথার কাছের ছ্যাদা গুলোর মধ্যে দিয়ে খুব সন্তর্পণে উঁকি মারছে নানা রকম পুর – তা সে সয়াবিন বা পনিরের রকমারি পদ হক বা আমিষ প্রেমিদের জন্যে ডিম বা মুরগির মাংসের কোন সুস্বাদু রান্নাই হক। পঁয়ত্রিশ থেকে আশির মধ্যে নিমেষেই পেয়ে যাবেন সুস্বাদু চিকেন আচারি, চিকেন ভুনা অথবা ছোলে মসালা, কড়াই পনির। আমার নিজের পছন্দ হল পনির বা ডিমের ভুরজি ভরা পাটিসাপটা। তবে সব কিছুর মধ্যেই স্বাদ আর স্বাস্থের কথা সমানভাবে মাথায় রাখাটাই এদের আলাদা করে তোলে। তৈরি পকেট বা বিগ স্মাইল গুলোকে তাওয়ায় সামান্য সেঁকলেই ওরা লুচির মত ফুলে ওঠে, ওদের ফাঁপা পেটে ইচ্ছে মত পুর ভরে আপনার জন্যে সহজেই তৈরি। সাথে ডিপ হিসেবে চীজ বা ধনেপাতা ও পুদিনার চাটনি ও আছে। আছে চিপস, কুকিস বা ঠাণ্ডা পানীয়ও, তবে মনে হয়না ওগুলোর দরকার আছে। তা যদি আপনার চোখের সামনে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর, চটজলদি তৈরি হয় এমন দারুণ খাবার, আর তা খেতে গিয়ে পকেটেও যদি নামমাত্রই ছাপ পরে, তাহলে কেনই বা আপনি প্যাকেটে ভরা ক্যালরি পূর্ণ খাবারের পথে হাঁটবেন? তার চেয়ে বরং পথ বদলে এই কিউপিস এ চলে আসুন। কোন অনুশোচনা নেই, আছে বরং সুস্বাদু ও স্বাস্থকর খাবারের নির্মল আনন্দ এই কিউপিস এ।

No comments:

Post a Comment