Friday, March 20, 2015
আহা কি শিক্ষা
আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম এই বিষয়টা নিয়ে লিখব। কিন্তু ‘অলস আমি’ টা আমায় লিখতেই দিচ্ছিল না। আজ ভাবলাম আর আলসেমি নয়। আজ লিখেই ফেলি বরং।
ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ চলছে আর ব্রেক হলেই মাঝে মাঝেই বেজে উঠছে এয়ারটেল এর নতুন অ্যাড, ‘ এক হাজারও মে মেরে পাপা হ্যাঁয়’। আগেও শুনেছি কিন্তু এইকদিন এ এত বেশিবার এই অ্যাড টা শুনে মাথায় কথাটা এল। ফল, এই লেখাটা।
আগে এই অ্যাড তার বিষয়ে ছোট্ট হাই লাইট – অ্যাড টার প্রধান মেসেজ টার ব্যাপারে। অ্যাড টা বলতে চায় যে নিজের বাবাকে যদি খুশি রাখতে পার তাহলে তোমার অনেক লাভ। কি সেই লাভ? বাবা তোমার সাথে নিজের ফোনের কানেকশান টা শেয়ার করবেন। এর ফলে বাবার ফোনের বিলের মধ্যেই তোমার বিল টাও জুড়ে যাবে। এর মানে কি? মানে হল, বাবা খুশি হলেই বাবা তোমার ও ফোন (এবং ইন্টারনেট) এর বিল দিয়ে দেবেন। ব্যাস, কেল্লা ফতে। যত খুশি ফোন ও ফোনের ইন্টারনেট ব্যাবহার কর, বিলের কোন চিন্তাই নেই, বাবা আছে তো।
আপাতদৃষ্টিতে একটী নিরীহ অ্যাড। কিন্তু কবার দেখার পরেই আমার মনে একটা অন্য ধারনা এল, সেটা বলার জন্যেই এই লেখা।
এই অ্যাডটার সিরিজ এর কয়েকটা আলাদা গল্প আছে। কিন্তু প্রতিটারই একই বিষয়বস্তু। সন্তান তার বাবার জন্যে কোন না কোন কাজ করে দিচ্ছে যেটা বাবার কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কখনও বাবার গাড়ি ধুয়ে দিচ্ছে, কখনও বাবাকে ‘বেষ্ট ড্যাড’ লেখা কাপে চা এনে দিচ্ছে বা কখনও বাবাকে নিজের ভাগের শেষ পিজাটা দিয়ে দিচ্ছে। তারপর লুকিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট মিষ্টি তাৎপর্যপূর্ণ হাসি। এরপর সেই প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ – বাবাকে খুশি রাখলে বাবা তার নিজের প্রিপেড বিল তোমার সাথে শেয়ার করবেন। ব্যাস, তোমার কাজ হাসিল। আর মা তাতে সায় ও দিচ্ছেন। আর বোকা বাবা তাতে ভীষণ খুশি হচ্ছেন, ভাবছেন আহা আমার সন্তান আমায় কত ভালবাসে।
প্রথমে মজার লাগলেও একটু পরেই মনে হতে লাগল এটা কি শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বাচ্চাদের? ওদের নিজের বাবার সাথে শঠটা? তাও আবার মায়ের স্বীকৃতির সাথে? আজকাল কার দিনে মানুষকে ঠকালেই সে উপরে উঠতে পারে, সাফল্যের চুড়োয়। আমরা, বড়রা সেটা জানি, ঠেকে শিখেছি সেটা। জানি সেটা ভুল, কিন্তু এড়াতে চাইলেও কখনও নিজেই সেই ভুলের ফাঁদে পা দেই বা কখনও তার শিকার হই। তাইবলে এইভাবে বাচ্চাদের সেটা শেখানো হবে? শুধু শেখানো নয়, সেটা করতে প্ররোচিত ও করা হবে? বোঝান হবে সেটা একটা মহান কাজ? এর পর হয়ত তাদের কোনদিন এটাও শেখানো হবে যে খুন, জখম, চুরি ইত্যাদিও ভাল কাজ, যদি সেটা কর তাহলে তোমারই লাভ, আর তুমি সেটা করলে আমাদের কোম্পানির জিনিস এর বিক্রিও আর বাড়বে। অতএব, সেই সব খারাপ কাজ গুলও তুমি করে ফেলো। ঠিক যেভাবে নিজের বাবাকে বোকা বানালে তোমার লাভ হবে, আর আমাদের কোম্পানির জিনিসের বিক্রি বেশি হবে। কারণ, বাবাকে ঠকিয়ে তোমাকে নিজের লাভ করার সুযোগ শুধুমাত্র আমাদের কোম্পানিই দেয়।
আর কি অদ্ভুত, এতে তোমার মায়েরও নাকি সায় আছে, তিনিই তোমায় উৎসাহ দিচ্ছেন বাবাকে ঠকাতে। সেই মা, যিনি নাকি আমাদের জীবনের সব শিক্ষার মুল স্থাপন করেন, যাতে আমরা মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠি।
মানুষ নিজের বাবাকে নিজের হিরো ভাবে, আর মা তার সবচেয়ে বড় আশ্রয়। ছোট্ট বেলা থেকে মা বাবাই সেই একমাত্র দুজন মানুষ যারা আমাদের পাশে সবসময় থাকেন, আমাদের সব দুঃখ মেটান। শুধু তাই নয়, আমাদের সব বিপদ ঠেকে বাঁচান। আর হ্যাঁ, আমাদের সব শখও মেটান, সেটা নিজের সাধ্যের বাইরে হলেও যথা সর্বস্ব চেষ্টা করেন, খালি আমাদের ওরা নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসেন বলে।
অতএব, বাচ্চারা, বাবাকে ঠকাও, তাতে তোমার লাভ বাড়বে, আর আমাদের কোম্পানির লাভ বাড়াও – আহা কি শিক্ষা!
Subscribe to:
Posts (Atom)